আবদুর রহমান ইবনে আউফ

2022-08-20 11:40:29 Views: 10

আবদুর রহমান ইবনে আউফ (আরবি: عبد الرحمن بن عوف‎‎) (জন্ম : হস্তীবর্ষের দশম বছর[১]) (মৃত্যু : ৩১ হিজরি / ৬৫২ খ্রিষ্টাব্দ[২] বয়স ৭২ বছর) ছিলেন একজন সাহাবী।

ইসলামের প্রথম দিকেই সাহাবি আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। আবুবকর সিদ্দিক (রা.) এর দাওয়াতে যারা মুসলমান হয়েছেন, তিনি তাদের অন্যতম। তার জন্ম ৫৮১ খ্রিষ্টাব্দে কোরাইশের বনু জোহরা গোত্রে। তিনি বয়সে নবীজি (সা.) থেকে ১০ বছরের ছোট। ইসলাম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল আবদে আমর বা আবদুল কাবা। রাসুল (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন আবদুর রহমান।

মদিনা হিজরতের পর নবীজি (সা.) তাকে সাদ ইবনে রবি আনসারির সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক করে দেন। সাদ (রা.) তাকে ডেকে বললেন, ‘আনসারদের সবাই জানে, আমি একজন ধনী ব্যক্তি। আমি আমার সব সম্পদ সমান দুইভাগ করে আপনাকে একভাগ দিতে চাই। আর আমার দুইজন স্ত্রী আছে। তাদের যাকে আপনার পছন্দ হয় আমি তাকে তালাক দেব। তারপর আপনি তাকে বিবাহ করে নেবেন। ’ কিন্তু আবদুর রহমান (রা.) বললেন, ‘আল্লাহ আপনার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। ভাই, আমার এসব কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। আমাকে শুধু মদিনার বাজারটি দেখিয়ে দিন। ’

মদিনার কাইনুকা বাজারে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন। কিছু দিন পর এক আনসারি নারীকে বিবাহ করেন। পরে রাসুল (সা.) তার কাপড়ে হলুদের দাগ দেখে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? বললেন, হ্যাঁ। নবীজি বললেন, ‘একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওলিমা করে নাও। ’ তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিছুদিন পর আরও কিছু পয়সা জমা হলে নবীজির নির্দেশ মতো ওলিমার কাজটি সেরে নেন। (বোখারি, হাদিস নং : ২০৪৯)

একবার সিরিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য নিয়ে তার একটি বাণিজ্য কাফেলা মদিনায় আসে। ৫০০ উটের পিঠে (মতান্তরে ৭০০) মালপত্র বোঝাই ছিল। এতে সারাটা মদিনায় রব পড়ে যায়। উম্মুল মোমিনিন আয়শা (রা.) বললেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, আবদুর রহমান জান্নাতে হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করবে। ’ উম্মুল মোমিনের এ কথা আবদুর রহমানের কানে গেল। তিনি বললেন, ‘হে জননী! আমি এ বিশাল বাণিজ্য সম্ভার আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলাম। ’ (উসদুল গাবাহ)

আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম (ধনী হিসেবে) জান্নাতে প্রবেশ করবেন আবদুর রহমান বিন আউফ। তিনি হামাগুড়ি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। ’ (মুসনাদে বাজ্জার : ৭০০৩)

ইবনে হাজার (রহ.) আল-ইসাবা গ্রন্থে উল্লেখ করেন, আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) মোট ৩০ হাজার দাস মুক্ত করেছেন। আল্লাহর রাস্তায় ৪০ হাজার দিনার, ৫০০ ঘোড়া এবং ৫০০ বাহন দান করেছেন। (উসদুল গাবাহ)

মৃত্যুকালে তিনি বদরি সাহাবিদের জন্য জনপ্রতি ৪০০ দিনারের অসিয়ত করেন। তখন ১০০ বদরি সাহাবি জীবিত ছিলেন। সবাই ৪০০ দিনার করে লাভ করেছেন। (আল-ইসাবাহ : ৪/২৯১, ২৯৩, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/১৬৩)

একবার তিনি কিছু ভূমি চল্লিশ হাজার দীনারে বিক্রি করেন এবং বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ বনু যুহরার (রাসূলুল্লাহর সা. জননী হযরত আমিনার পিতৃ-গোত্র) লোকদের মধ্যে এবং ফকীর-মিসকীন, মুহাজির ও আযওয়াজে মুতাহ্হারাতের মধ্যে বণ্টন করে দেন।


আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। রাসুল (সা.) তাঁর সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করেছিলেন এবং সে দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন। যার ফলে তিনি একসময় অঢেল সম্পদের মালিক হন। তবে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য তাঁকে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করেনি। তিনি দান-সদকা করতে বেশি ভালোবাসতেন। অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েও তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও দুনিয়াবিমুখ ছিলেন। সম্পদের ব্যাপারে সবসময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতেন।

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ছিলেন কোরআন ও হাদিসের জ্ঞানে পরিপূর্ণ, পরামর্শদানে বিজ্ঞ, বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, ফতওয়া দানে অভিজ্ঞ। তাই প্রথম তিন খলিফাই তাঁকে বিশেষ মর্যাদার আসন দান করেছিলেন।


© mahmud hasan 2023